বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:বিজেপির জাতীয় স্তরে সাংগঠনিক রদবদলে পদ হারিয়েছেন রাহুল সিনহা। তাতে নিজের ক্ষোভ তিনি গোপন রাখেননি। প্রকাশ্যে সে ভাবে তেড়েফুঁড়ে কিছু না বললেও ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন, ৪০ বছর ধরে দলের সেবা করার পুরস্কার তাঁর এটাই। তৃণমূল থেকে কাউকে আসতে হবে বলে তাঁকে নাকি সরতে হয়েছে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না। তিনি কয়েকদিনের মধ্যেই নিজের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবেন।
রবিবার বিষয়টি নিয়ে তৎপর হন মুকুল রায়। বিজেপি সূত্রে খবর, গোপনে রাহুল সিনহার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তিনি। শনিবারই তাঁকে দলের সর্বভারতীয় সহসভাপতি করা হয়েছে। এদিন তিনি রাহুল সিনহাকে বিজেপিতে ‘বাংলার মুখ’ বলে উল্লেখ করলেন। এদিন তাঁর কর্মসূচি ছিল পুরুলিয়ায়। বাঁকুড়া হয়ে পুরুলিয়ায় যান তিনি। তার আগে কাঁকসার বাঁশকোপায় একটি হোটেলের সামনে দলের সমর্থকদের অভিনন্দনের জোয়ারে ভেসে যান তিনি। সেখানেই তিনি বলেন, ‘রাহুল সিনহা দীর্ঘদিন ধরে বিজেপির হয়ে লড়াই করছেন। কাল যদি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দু–একটি কথা তিনি বলেও থাকেন, তাতে কিছু প্রমাণ হয় না। বাংলায় আমরা সবাই মিলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করব। এবার বাংলার ক্ষমতা থেকে তৃণমূলকে সরতে হবেই। সরাবে বিজেপি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগামিদিনে বাংলা–সহ যে সব রাজ্যে ভোট হচ্ছে, তাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বেই লড়াই করবে বিজেপি।’
শুধু মুকুল রায়ই নন, বিষয়টি নিয়ে আসরে নেমেছেন বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুও। তিনি বলেন, ‘বিজেপিতে ‘দলের মুখ’ হলেন রাহুল সিনহা। রাজনীতিতে আসার আগেই ছেলেবেলা থেকে আমি রাহুলদাকে দেখে আসছি। রাহুলদা চিরকালই আমাদের নেতা ছিলেন। আছেন। থাকবেনও। এ ব্যাপারে কোনও দ্বিমত নেই। দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়ের মতো রাহুলদাও দলের মুখ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দলে অনেক তাজা রক্ত আছে। আরও তাজা রক্তের প্রয়োজন রয়েছে। জাতীয় স্তরেও বিভিন্ন সময়ে দলে অনেক পরিবর্তন হয়েছিল। তাই রাহুলদার পদ থাকল, কি চলে গেল, তাতে কিছু এসে যায় না। রাহুলদার গুরুত্বের কোনও অভাব কখনও হয়নি। হবেও না।’
উল্লেখ্য, শনিবার থেকেই দলের তরফে রাহুল সিনহার অভিমান ভাঙানোর প্রচেষ্টা শুরু হয়ে যায়। প্রথম মুখ খোলেন অনুপম হাজরা। যাঁর অন্তর্ভুক্তি নিয়েই বিজেপিতে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। মনে করা হচ্ছে, তাঁকে জায়গা দিতেই রাহুল সিনহাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই অনুপম হাজরাই শনিবার রাতে মন্তব্য করেন, ‘এটা ঠিক, রাহুল সিনহার অভিমান হয়েছে। তবে আমার বিশ্বাস, তাঁর সঙ্গে কথা বললেই সব ঠিক হয়ে যাবে।’ এদিকে, তৃণমূলের রাজনৈতিক পরামর্শদাতা পিকের চক্রান্তে ব্যক্তিগত স্বার্থে বিজেপির কিছু নেতা শামিল হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বসিরহাটে।
আর সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই রবিবার রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় ওই অঞ্চল। রীতিমতো সঙ্ঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে দলের দুই গোষ্ঠী। দলের এক পক্ষের অভিযোগ, সাংগঠনিক জেলার সভাপতি টাকা খেয়েছেন প্রশান্ত কিশোরের (পিকে) কাছ থেকে। আর এ ভাবেই তিনি এবং তাঁর সহযোগী কয়েকজন দলটাকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তারক ঘোষ।